দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান কম নয়। দেশে ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থার বিষয়টি আলোচনায় সেভাবে আসছে না।
নানা কারণে এ খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কেন এমন সংকট দেখা দিল তা খতিয়ে দেখতে হবে।
মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনায় ব্যর্থ হলে দুর্বল ও অদক্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত বা অবসায়ন করা হবে। এর আগে কেন ও কোথায় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হচ্ছে তা দ্রুত বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিতে পারছে না- তার কারণও খতিয়ে দেখতে বলা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া বিভিন্ন নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে- এখন থেকে জামানত গ্রহণ নিশ্চিত করে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই ঋণ দিতে হবে। নির্দেশনায় ঋণখেলাপিদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি আছে।
এদের মধ্যে যারা টাকা পরিশোধ করতে ইচ্ছুক তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। এ ছাড়া অসাধু গ্রাহকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। বৈঠকে উচ্চ সুদহার কমানোর বিষয়েও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জানা গেছে, এ খাতের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শুধু নামেই টিকে আছে। বস্তুত খেলাপি ঋণের কারণেই এ খাতের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
আর্থিক খাত যাতে ভয়াবহ বিপর্যয়ে না পড়ে তার জন্য আগে থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো গ্রাহক প্রতারণার আশ্রয় নিলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিহ্নিত করতে হবে। অনেক সময় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কোনো কোনো গ্রাহক প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন ব্যবস্থা চালু করতে হবে যাতে অসাধু কর্মকর্তা ও গ্রাহক যৌথভাবে চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে তারা ধরা পড়বে। এসব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। তার আগে এ খাতের প্রতি গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। গ্রাহককে এমন বার্তাটি দিতে হবে যে, এ খাতে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কেউ পার পাবে না।